ভূমিসেবায় ডিজিটাল আয়োজন

by bdnewsinsider

মানুষের হয়রানি ও ভোগান্তি বন্ধে এবং এ-সংক্রান্ত সেবা সহজলভ্য করতে ডিজিটালাইজড হয়েছে ভূমিসেবা। ঘরে বসেই পাওয়া যাচ্ছে এখন ভূমিবিষয়ক নানা সেবা। এখন এক ঠিকানায় (land.gov.bd) মিলছে ভূমিসংক্রান্ত প্রায় সব সেবা। ভূমি ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা ও গতিশীল করার পাশাপাশি সচেতনতা বাড়াতে ‘বিশেষ সেবা সপ্তাহ’ আয়োজন করে ভূমি মন্ত্রণালয়। এ আয়োজনে ‘ভূমিসেবা ডিজিটাল, বদলে যাচ্ছে দিনকাল’ স্লোগানে ভূমি ব্যবস্থাপনায় নানা ডিজিটাল উদ্যোগ ও সেবা জনগণের সামনে তুলে ধরা হয়।
এক সময় ভূমিসেবা নিতে গিয়ে ঘুষ-বাণিজ্যসহ হয়রানি ও ভোগান্তির যেন শেষ ছিল না। এখন অনলাইনে দেওয়া যাচ্ছে ভূমি উন্নয়ন কর, পাওয়া যাচ্ছে ই-নামজারি, ডিজিটাল ভূমি রেকর্ড, খাসজমি বন্দোবস্ত, অর্পিত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা, সায়রাত মহাল ব্যবস্থাপনা, ভূমি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ, ভূমি জোনিং কার্যক্রম, ভূমি রেকর্ড আধুনিকীকরণের মতো সেবা। এ ছাড়া ভূমিবিষয়ক শুনানি হচ্ছে অনলাইনে। ভূমিসেবার জন্য রয়েছে সার্বক্ষণিক কল সেন্টার (১৬১২২)। এসব উদ্যোগের মাধ্যমে দুর্নীতি ও ভোগান্তি এখন অনেকটাই কমেছে। এর স্বীকৃতিও পেয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি অনলাইন ভূমি উন্নয়ন কর বাস্তবায়নের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘ওয়ার্ল্ড সামিট অন দ্য ইনফরমেশন সোসাইটি (ডব্লিউএসআইএস)’ পুরস্কার জিতেছে সরকারের এ মন্ত্রণালয়টি। ভূমি সচিব মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, জনগণের ভোগান্তি দূরীকরণ, দুর্নীতি রোধ এবং মামলা কমানোর লক্ষ্যে সরকার ভূমি ব্যবস্থাপনায় ডিজিটালাইজেশনের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে।
অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর
নাগরিকের অর্থ, সময় ও শ্রম সাশ্রয়ের লক্ষ্যে অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর ব্যবস্থা চালু হয়েছে। দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে নাগরিকের মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে ভূমি উন্নয়ন কর খুব সহজেই দিতে পারছেন। ভূমি মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত প্রায় ৩ কোটি ৮ লাখ সুবিধাভোগী অতিরিক্ত খরচ ছাড়াই ভূমি উন্নয়ন কর দেওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন। ৩ কোটি জমির তথ্য ইতোমধ্যে ম্যানুয়াল থেকে ডিজিটালে রূপান্তরিত হয়েছে। প্রায় ৭০ শতাংশ নাগরিক স্বচ্ছভাবে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করেছেন। অন্তত ৫০ শতাংশ নাগরিকের হয়রানি কমেছে। প্রতিদিন ৩০-৪০ লাখ টাকা তাৎক্ষণিকভাবে সরকারি কোষাগারে জমা হচ্ছে। অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর ব্যবস্থার মাধ্যমে পৃথিবীর যে কোনো প্রান্ত থেকে জমির খাজনা (ভূমি উন্নয়ন কর) দেওয়া যাবে। ভূমি কর দেওয়ার এ সুবিধার কারণে মানুষের ভূমিসংক্রান্ত হয়রানি কমার পাশাপাশি দুর্নীতিও কমেছে।
ই-নামজারি
ভূমি ব্যবস্থাপনায় মিউটেশন বা নামজারি গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রক্রিয়া। জমি কেনা বা অন্য কোনো উপায়ে পাওয়া জমির মালিকানা পরিবর্তনের প্রক্রিয়াকেই নামজারি বলে। আগে সনাতন পদ্ধতিতে করা হলেও বর্তমানে নামজারি অনলাইনে করা হয় আর এই ডিজিটাল পদ্ধতিই হলো ই-নামজারি বা ই-মিউটেশন। সারাদেশে ভূমি ই-নামজারি সেবা চালু করা হয় ২০১৯ সালের ১ জুলাই। প্রচলিত পদ্ধতিতে নামজারি নিয়ে মানুষের ভোগান্তি ও হয়রানির শেষ ছিল না। ই-নামজারি মানুষের হয়রানি অনেকটাই দূর করেছে।
ভূমি মন্ত্রণালয়, ভূমি সংস্কার বোর্ড এবং এটুআই প্রোগ্রাম যৌথভাবে মাঠ পর্যায়ে ই-নামজারি কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছে। ই-নামজারি আবেদনের জন্য নাগরিককে www.land.gov.bd এ ঠিকানায় আবেদন করতে হবে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ইতোমধ্যে ৬৫ লাখ নামজারি আবেদনের মধ্যে ৫৭ লাখ আবেদন নিষ্পত্তি হয়েছে।
ডিজিটাল ভূমি রেকর্ড
ডিজিটাল ল্যান্ড রেকর্ড ভূমি ব্যবস্থাপনায় আরও একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ। ২০২০ সালের ২৩ ডিসেম্বর দেশের ২১ জেলায় একযোগে চালু হয় ডিজিটাল রেকর্ড রুম। বর্তমান সারাদেশে এই সেবা চালু রয়েছে। এ ব্যবস্থাপনায় ঘরে বসেই নাগরিক খতিয়ানের সার্টিফায়েড কপির অথবা মৌজা ম্যাপ পাওয়ার জন্য land.gov.bd-এ ঠিকানায় গিয়ে আবেদন করতে পারবেন। অনলাইনে ফি দেওয়ার পর নির্ধারিত সময় এবং নির্ধারিত স্থান থেকে অথবা ডাকযোগে খতিয়ানের সার্টিফায়েড কপি গ্রহণ করতে পারবে। এ পর্যন্ত ৫ কোটি ১৩ লাখ খতিয়ান ডিজিটাইজ করা হয়েছে।
ভূমিসেবা হটলাইন
হাতের মুঠোয় ভূমিসেবা এই স্লোগান বাস্তবায়নে প্রান্তিক মানুষের ভূমিসেবা নিশ্চিত করতে ২০১৯ সালের ১০ অক্টোবর চালু হয় ভূমিসেবা হটলাইন নাম্বার। অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে পারে না এমন নাগরিক চাইলে ১৬১২২ এই নম্বরে কল করে প্রত্যাশিত ভূমিসেবা গ্রহণ করতে পারবেন। এ ছাড়া নাগরিক সেবা প্রাপ্তিতে যে কোনো অভিযোগ জানাতে পারেন। ভূমি সেবায় জরুরি হটলাইন নাম্বার সেবা দেওয়ার মাধ্যমকে আরও সহজ করে দিয়েছে।
ডিজিটাল ভূমি জোনিং
কৃষিজমি সুরক্ষায় উল্লেখযোগ্য একটি উদ্যোগ হলো ‘মৌজা ও প্লটভিত্তিক ডিজিটাল ভূমি জোনিং’। এই প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের সব মৌজায় ডিজিটাল ও স্যাটেলাইট ইমেজের মাধ্যমে মানচিত্র তৈরি করে ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে। দেশের ১ লাখ ৩৮ হাজার ৪১২টি মৌজার ম্যাপ ডিজিটাইজ করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ডিজিটাইজড ম্যাপের সঙ্গে কেনা ভূমির স্যাটেলাইট ছবি সমন্বয় করা হবে। এ প্রকল্প কার্যকর হলে কার্যকর ডিজিটাল ক্যাডাস্ট্রাল ম্যাপ তৈরি হবে। ফলে এক ক্লিকেই দেখা যাবে জমির শ্রেণি কী এবং জমির মালিকের সব তথ্য।

একই লেখা

Leave a Comment