অন্ত:কোন্দলে জ্বলছে বিএনপি

by bdnewsinsider
যেকোন  সংগঠন বা দলের জন্য অন্ত:কোন্দল এক আতঙ্কের নাম। কারণ অন্ত:কোন্দল কখনোই সুখের হয় না, এটি ধ্বংসের বার্তা বহন করে। এবার এমনই এক বার্তা পেল বিএনপি। সম্প্রতি সিলেটের এক বিএনপি নেতাকে প্রকাশ্যে জুতাপেটার ঘটনা ঘটেছে। আর এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা বিএনপি’রই নেতকর্মী। বিএনপিতে এমন ঘটনায় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে আগ্রহের অন্ত নেই। তাদের মতে, এ যেন ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’। এমনিতেই বিএনপি এখন ক্ষয়িষ্ণু অবস্থায় রয়েছে। দলটির নেতৃত্ব সংকট ভোগাচ্ছে দলটিকে। দলের মহাসিচব ছাড়া দলটিতে কথা বলার কেউ নেই। এর মধ্যে এমন ঘটনা সর্বত্র আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এই নিয়ে দলটির সচেতন নেতাকর্মীদের হতাশাও প্রকাশ করতে দেখা গেছে। কারণ দলটি প্রায় ১৫ বছর ক্ষমতার বাইরে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাওয়া তাদের জন্য এখন একটি বাধ্যতামূলক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। সামনের বার নির্বাচনে না গেলে দলটি অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। এই অবস্থায় দলীয় অন্ত:কোন্দলে জ্বলছে বিএনপি।
সম্প্রতি সিলেট জেলার বিএনপিকে নিয়ে পানি কম ঘোলা হয়নি। জেলা বিএনপির কাউন্সিলের সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্নের পর ২৪ ঘণ্টা আগে হঠাৎ করে স্থগিত করা হয় কাউন্সিল। কাউন্সিলে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরীর জেলা কমিটির সভাপতি হওয়ার জোর গুঞ্জন শোনা যায়। কিন্তু অদৃশ্য কেন্দ্রের চাপে মেয়র আরিফুল প্রার্থীতা প্রত্যহার করে নেন। এ নিয়ে জেলার অধিকাংশ নেতাকর্মীর মধ্যে হতাশ দেখা দেয় এবং একই সাথে আবার কবে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে তা নিয়েও অনিশ্চিয়তা তৈরি হয়। এরই মধ্যে গত ২৪ মার্চ (বৃহস্পতিবার) বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ২৯ মার্চ কাউন্সিলের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। বেশ উৎসবমুখর পরিবেশে এবং কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। ডেলিগেটদের সরাসরি ভোটের মাধ্যমে সিলেট জেলা বিএনপির পরবর্তী নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়। পুরো কাউন্সিল সুন্দরভাবে সম্পন্ন হওয়ায় এ নিয়ে বেশ আলোচনাও হয়েছিল। ফলাও করে প্রচার করতে দেখা গেছে বিষটিকে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা দাবি করেছিল, জেলা কাউন্সিলের মাধ্যমে জেলায় যেমন নতুন নেতৃত্ব এসেছে তেমনি দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে একটা চাঙ্গা ভাব এসেছে। আর সন্মেলনে যেহেতু কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি, এর মানে সিলেট জেলা বিএনপি এখন অনেক বেশি শক্তিশালী এবং ঐক্যবদ্ধ।
কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের সেই ধারণাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখালো গত শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে। যেখানে দেখা গেছে, সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক লিলু মিয়াকে প্রকাশ্যে জুতাপেটা করেন জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সুহেল আহমদ চৌধুরী। ঘটনাটি নিয়ে যত সমালোচনা হয়েছে তার চেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে বিএনপির অন্ত:কোন্দলের বিষয়টি নিয়ে। বিষয়টি অস্বস্তিকর হওয়ায় পাশ কেটে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল বিএনপি। কিন্তু এখন আরও নতুন করে চাপের মুখে ফেলে দিল গত রোববার জেলা বিএনপি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি। সেখানে জুতাপেটা করার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে এবং হামলাকারীদের সন্ত্রাসী বলে অভিহিত করা হয়েছে। এই ঘটনায় বিএনপি এখন নিজেরাই নিজেকে সন্ত্রাসীর তকমা দিলো। বিএনপি সম্পর্কে যে অভিযোগ এতো দিন আওয়ামী লীগ করে আসছে সেটি এখন বিএনপি নিজেই স্বাকীর করেছে। এতে করে বিএনপি আরও চাপের মুখে পড়লো বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, যে মুহূর্তে দলটির নেতাকর্মীদের সব রকম দ্বন্দ্ব-কোন্দল ঝেড়ে ফেলে ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন, সেই মুহূর্তে দলটিতে বিভক্তি আরও বাড়ছে। দলে আধিপত্য বিস্তার এবং নিজস্ব বলয় সৃষ্টির অভিপ্রায়ে স্থানীয় নেতাদের মধ্যে বিদ্যমান কোন্দল-রেষারেষি দিন দিন প্রকট হচ্ছে। এখন দেখার বিষয় বিএনপির এই অন্ত:কোন্দল কোথায় শেষ হয়। আর এই অন্ত:কোন্দল শেষ করে বিএনপি আদৌ এগিয়ে যেতে পারে কি না।

একই লেখা

Leave a Comment