গুজব হলো বিএনপির নেশা ও পেশা

by bdnewsinsider

নির্বাচনের আগে আন্দোলনের মাঠে গুজব-গুঞ্জনসহ পশ্চিমা ভরসায় বড় রকমের মার খেয়ে ঘরে ঢুকে যায় বিএনপি। গুজব ও বিদেশনির্ভরতায় তলে তলে তাল হারিয়ে বিএনপির অতলে ডোবার বিপরীতে বিএনপির পেশাদার গুজববাজদের হয়েছে পোয়া বারো। এরা অধরা থেকে সময়ে সময়ে নিজেদের শক্তিমত্তা দেখায়। মাঝে মধ্যে দম নেয়। তবে থামে না। তাদের মূল ক্লায়েন্ট বিএনপি। সঙ্গে সমমনারা। আজ এটা, কাল সেটা দিয়ে দেশকে এবং দেশের রাজনীতিকে গুজবের ফানুসে ভাসিয়ে দেয়া চক্রটির মাধ্যম হচ্ছে ফেসবুক, ইউটিউব, হোয়াটস অ্যাপের মতো সোশ্যাল মিডিয়াগুলো। বিএনপির আন্দোলন ও নির্বাচন সামনে রেখে গুজবের তাওয়ায় নতুন করে তাপ দিয়ে এখন আবার দম ধরেছে তারা। তাদের বেশিরভাগ গুজবই সরকারকে টার্গেট করে আবর্তিত। উদ্দেশ্য সরকারকে বিব্রত করা, দেশকে উতাল করা। আর তা করতে গেলে দরকার মানুষকে বিভ্রান্তিতে ফেলা। 

সরকারের দিক থেকে এসব গুজব-অপপ্রচার শক্ত হাতে ঠেকানোর উদাহরণ অনেক। গুজববাজরা বেশ সংগঠিত, যূথবদ্ধ। তাদের শক্ত গাঁথুনি দেশে-বিদেশে দুই জায়গায়ই। তবে মাঝে মাঝে তাদের মধ্যেও যে চিড় ধরে না তা নয়। ইলিয়াস ও পিনাকীর দ্বন্দ্ব যে প্রকাশে মাঝে মধ্যে জমে ওঠে তা সবাই উপভোগ করে। 

এসব গুজববাজ টার্গেট করে ব্যক্তিগত বিষয়াদি থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা-বাণিজ্য, রাজনীতি, অর্থনীতি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, দেশের চিন্তাশীল মানুষকে নিয়ে রগরগা কল্পকাহিনী বানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় মানুষদের বোকা বানিয়ে চলছে নিয়মিত। তাদের রুখতে প্রশাসনের বাইরে কাজ করছে আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন-সিআরআইর টিম। সরকারবিরোধী অপপ্রচারের বিরুদ্ধে জবাব, তথ্য এবং সরকারের উন্নয়নচিত্র জানান দেয় তারা। 

গুজব রটনাকারীদের কাজের আওতা বিস্তর-ব্যাপক। রাজনীতি, ধর্ম, কূটনীতি, অর্থনীতি এমনকি শিক্ষা-খেলাধুলা সেক্টরও বাদ দেয় না তারা। পদ্মা সেতুতে মানুষের কল্লার জন্য ছেলেধরা সন্দেহে বেশ ক’জনকে গণপিটুনিতে হত্যা, ব্যাংক রিজার্ভ শেষ, বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার মতো হয়ে গেছে থেকে শুরু করে সরকার পতনের দিন-তারিখ পর্যন্ত বাজারজাত করে ছাড়ে তারা। দিন শেষে তারা ব্যর্থ হলেও সময়ে সময়ে সফল। মানুষকে ঘোরে ফেলা ও দেশে অস্থিরতা তৈরিতে কম-বেশি কামিয়াবি হচ্ছে। তাদের গুজব ক্যারিশমায় মুগ্ধ ও পুলকিত বিরোধী দলকে পুলকে রাখার পাশাপাশি কন্টেন্ট সেল বাড়ছে। কাউকে হাওয়ায় ভাসাতে এবং কাউকে ডোবাতে গিয়ে বিএনপিকে মাঠে আছাড় দিয়ে গুজববাজরা তলের খবরকেও আরো তলিয়ে দিয়েছে। উপরে-উপরে ঘটনার ঘনঘটার মাঝে দেশের ভেতর-বাইরের কিছু ইউটিউবার নানা গরম কথায় মুখরোচক ব্যাখ্যায় দর্শক বাড়িয়ে নিজেদের ব্যবসা লুটেছে কয়েক দিন। আন্দোলনেরও সাড়ে সর্বনাশ করেছে। আন্দোলনের স্পিড এবং স্পিরিটও বরবাদ করে ছেড়েছে। একদিকে রাজনৈতিক কর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আক্ষরিক অর্থেই মার খেল, আরেকদিকে ইউটিউবারদের দূরে বসে ঘি-মধু খেয়ে নিরাপদ জীবনযাপন নিশ্চিত হলো। এরা কার পক্ষে বা বিপক্ষে বোঝা মুশকিল। 

বিভক্তি তৈরি ও টিকিয়ে রাখায় কামিয়াবি এ কমিউনিটিটির অবশ্য রাজনীতির বাইরে তেমন সাবজেক্টও নেই। এর মাঝে চরম দৃষ্টান্ত রেখেছেন ভারতীয় সাংবাদিক চন্দন নন্দী। তার সর্বশেষ তথ্য ছিল গতবছরের ৩ নভেম্বর শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছাড়বেন। সেটি খুব মনে ধরেছিল বিএনপির। গুজবটির প্রচার-প্রসারে কোমর বেঁধে নেমেছিল বিএনপি। চন্দন নন্দীতে অতি উল্লসিত হয়ে পরে বুঝতে বুঝতেই তারা কেবল চোখে অন্ধকার দেখেছে। বিএনপি নেতাকর্মীরা বুঝতেই পারেননি চন্দন নন্দী জার্নালিজমের নামে কী সেনসেশনালিজমটাই না করেছেন। তথ্যযুক্তির অবাধ প্রবাহ মানুষের পারস্পরিক যোগাযোগ সহজ করেছে। এখন পৃথিবীর একপ্রান্তের মানুষ অন্যপ্রান্তের চেনাজানা আপনজন বা অপরিচিত কোনো মানুষের সঙ্গে ভাবের আদান-প্রদান ও তথ্যের বিনিময় করতে পারে খুব সহজেই। প্রযুক্তির এই উন্নয়ন মানুষের জীবনকে সহজ-সাবলীল করেছে। গোটা মানবজাতিকে গতিশীল করেছে। কিন্তু একই সঙ্গে তথ্যের অবাধ প্রবাহ মানুষকে বিভ্রান্তও করছে। একটি শ্রেণি স্বার্থ হাসিলের মতলবে সমাজে ভুল ও মিথ্যা কিংবা আংশিক মিথ্যা ছড়িয়ে দিচ্ছে। ভয়ভীতি-আতঙ্কের সৃষ্টিও করছে। পজিশন-অপজিশন কারো জন্যই গুজব শুভ নয়। এতে সাময়িক কোনো পক্ষের পুলক মিলতে পারে। কিন্তু আখেরে তা বুমেরাং হয়। বড় ক্ষতিটা হয় দেশের-সমাজের। যে কারণে সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার ও অপপ্রচার রুখতে শক্ত পদক্ষেপ নেয়ার দাবি উঠেছে বহুদিন আগে থেকেই। কিছু কিছু সোশ্যাল মিডিয়া ও অনলাইন প্ল্যাটফর্ম পরিণত হয়েছে গুজবনির্ভর অপপ্রচারের আখড়ায়। নামে-বেনামে তাদের ইউটিউব চ্যানেল, আইপি টিভি, অনলাইন পোর্টালের ছড়াছড়ি। পেজ, গ্রুপ, ইভেন্ট খুলে যে যার ইচ্ছামতো মনের মাধুরী মিশিয়ে নানা অপপ্রচারে লেগে আছে। এসবের নেপথ্যে বড় ধরনের ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইমও রয়েছে। শক্ত হাতে না ধরলে এ চক্রকে রোখা কঠিন। ভুয়া আইডি এবং বিদেশি প্রতিষ্ঠান ও বিদেশ থেকে পরিচালিত হওয়ার কারণে সোশ্যাল মিডিয়ায় সংঘটিত অপরাধ দমনে আমাদের স্থানীয় আইন সেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা সম্ভব হয় না। বাস্তবতা বুঝেই তারা সামনে আগোয়ান। সাইবারজগতের বিস্তার দ্রুতগতিতে বাড়ছে। দিন যত যাচ্ছে কোটি কোটি মানুষ এর সঙ্গে সংযুক্ত হচ্ছে। বাংলাদেশে মোবাইল প্রযুক্তির ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। ইন্টারনেট সুবিধা সহজীকরণ হয়েছে। এর ভালো দিকের সঙ্গে মন্দ দিক বেশি যোগ হয়ে গেছে। এমন সম্ভাবনাকে নিয়ে আসা হয়েছে শঙ্কার বিষয়ে। সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব-মিথ্যাচার কেবল বাংলাদেশের সমস্যা নয়, বৈশ্বিক সমস্যা। বিশ্বের অনেক দেশকেও এই সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। বিভিন্ন দেশে এরই মধ্যে সার্ভিস প্রোভাইডার হিসেবে ইউটিউব-ফেসবুক, টুইটারের মতো সোশ্যাল মিডিয়াকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। এতে গুজব ও সামাজিক অস্থিরতার কিছুটা লাগাম টানা সম্ভব হচ্ছে। 

একই লেখা

Leave a Comment