মাত্র ১০ টাকায় চোখের সব ধরণের জটিল চিকিৎসা

by bdnewsinsider
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত ২৫০ শয্যার জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে মাত্র ১০ টাকায় মেলে চোখের সব চিকিৎসা। বেসরকারি হাসপাতালে আপনার যে অপারেশন করতে খরচ হবে লাখ লাখ টাকা সেখানে এই হাসপাতালে তা বিনা মূল্যেই হচ্ছে। শুধু অপারেশনই নয়, পাশাপাশি রোগীদের সব ওষধও ফ্রিতে দেওয়া হয় হাসপাতালটি থেকে। এছাড়া রোগীদের রীক্ষানিরীক্ষাও হচ্ছে বিনা মূল্যে কিংবা স্বল্পমূল্যে। এই হাসপাতালে কোন কোন অপারেশনের জন্য ইনজেকশন দেওয়া হয়, যার মূল্য ১২ হাজার টাকা। হাসপাতালটির জরুরি বিভাগ খোলা থাকে ২৪ ঘণ্টা। এ হাসপাতালের ৯টি বিভাগ চালু রয়েছে। এগুলো হচ্ছে—ক্যাটারাক্ট, কর্নিয়া, গ্লুকোমা, রেটিনা, অকুলোপ্লাস্টিক, পেডিয়াট্রিক অপথোমোলজি, নিউরো অপথোমোলজি, কমিউনিটি অপথোমোলজি ও লোভিশন।
হাসপাতালটিতে রয়েছে ১২টি অপারেশন থিয়েটার। যেখানে সাত ধরনের অপারেশন হয়। অত্যাধুনিক মেশিনে প্রতিদিন ছানিসহ কমপক্ষে ৮০টি অপারেশন হচ্ছে। এছাড়া প্রতিদিন আড়াই থেকে ৩ হাজার রোগী এই হাসপাতালের বহির্বিভাগে আসেন চিকিৎসাসেবার জন্য। এখানা প্রতারিত হবার কোনো সুযোগ নেই। কারণ দালাল নিয়ন্ত্রণ করতে মনিটরিং টিম সার্বক্ষণিক তৎপর থাকে।
প্রতিদিন ৬০ জন রোগীর ছানি অপারেশন হচ্ছে। আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি ফ্যাকো সার্জারির মাধ্যমে এখানে চোখের ছানি অপারেশন করা হয়। এতে করে রোগীকে সাধারণত সকালে অপারেশন করে বিকালে বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। চোখের যে কোন ধরনের জটিল অপারেশন এখানে হয়। ১০ টাকার টিকিট কাটলেই রোগীর দায়িত্ব শেষ। বাকি সব চিকিৎসা বিনা মূল্যে প্রদান করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। চোখের লেন্সও ফ্রি দেওয়া হচ্ছে। অপারেশনে রোগীর প্রয়োজনীয় সব ওষুধ বিনা মূল্যে প্রদান করা হয়। এমনকি রোগীকে যখন ছাড়পত্র দেওয়া হয়, তখনো বাসায় গিয়ে রোগীর যেসব ওষুধ ব্যবহারের প্রয়োজন হয় সেগুলোও বিনা মূল্যে প্রদান করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বাইরে থেকে ওষুধ ক্রয়ের প্রেসক্রিপশন কোন ডাক্তারই করেন না। চক্ষু বিশেষজ্ঞ ছাড়া অন্য কোন ডাক্তার এই হাসপাতালে নেই। অধিকাংশই চোখের ওপরে এমডি, এফসিপিএস ও উচ্চতর ডিগ্রিধারী। ২৪ ঘণ্টা জরুরি বিভাগ খোলাসহ যে কোন সরকারি বন্ধ ছাড়াই প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত বহির্বিভাগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেন।
যদিও এদের পদ মেডিক্যাল অফিসার, কিন্তু তাদের প্রত্যেকের চক্ষু বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি রয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায় , জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে রয়েছে অনেক রোগীর ভিড়। সুশৃঙ্খলভাবেই চলছে এখানকার সব ধরণের কার্যক্রম। রোগীরাই নিজ উদ্যোগে অনেকটা শান্তিপূর্ণ ও শৃঙ্খলার মধ্যে দিয়ে সেবা নিচ্ছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেও বেশ সুশৃঙ্খলভাবে কার্যক্রম চালাতে দেখা গেছনে
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা রোগীরা জানান, সরকারি হাসপাতালে যে এত সুন্দর চিকিৎসাসেবা পাওয়া যায়, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে না আসলে সেটা বুঝতে পারতাম না। ১০ টাকায় টিকিট কেটে সব ধরনের চিকিৎসাসেবা ও বিনা মূল্যে ওষুধ পেয়ে রোগীরা খুশি। আরও একজন রোগী রোকসানা আক্তার (৫৫) জানান, ১০ টাকায় টিকিট কেনার পর অপারেশন হয়েছে, লেন্সও লাগানো হয়েছে। কোনো টাকা-পয়সা লাগেনি। ঝিনাইদহ ও রংপুর থেকে আসা আবুল হোসেন (৬৫) ও আক্কাস মিয়ার (৫৫) চোখে জটিল অপারেশন হয়েছে। তাদের বাইরে থেকে কোনো ওষুধ কিনতে হয়নি। সবই হাসপাতাল থেকে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে বহির্বিভাগে আটটি কক্ষে রোগী দেখা হয়। এর মধ্যে বয়স্ক ব্যক্তি (সিনিয়র সিটিজেন), মুক্তিযোদ্ধা ও অটিস্টিকদের জন্য আলাদা কক্ষ আছে।
জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের বহির্বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. ফরিদ হোসেন জানাম, প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অনেক রোগী চোখের চিকিৎসা নিতে এই হাসপাতালে আসেন। এর মধ্যে যাদের অপারেশনের প্রয়োজন হয়, তাদের অপারেশনের জন্য নির্ধারিত তারিখ দিয়ে দেওয়া হয়। নির্ধারিত দিনে অপারেশন করা হয়। একই সঙ্গে রোগীর পরীক্ষানিরীক্ষা শতভাগ নিশ্চিত করা হয়। এখানে এক্সরে, রক্ত পরীক্ষা, প্রস্রাব, ইসিজি, সিটিস্ক্যান ও আলট্রাসনোগ্রামসহ সব ধরনের পরীক্ষানিরীক্ষার ব্যবস্থা আছে।
জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. গোলাম মোস্তফা জানান, সর্বাধুনিক চিকিৎসা উপকরণ, দক্ষ চিকিৎসক ও উন্নত চিকিৎসাসেবাই প্রতিষ্ঠানটিকে দেশে এবং বিদেশে পরিচিত করে তুলছে। ১০ টাকার টিকিট কিনে এ হাসপাতালে চোখের সব ধরনের চিকিৎসা ও অপারেশন করা হয়। এই হাসপাতালে চিকিৎসা ও বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষার জন্যও রয়েছে অত্যাধুনিক সব যন্ত্রপাতি। রোগীদের সব ওষুধ বিনা মূল্যে হাসপাতাল থেকে প্রদান করা হয়।
তিনি বলেন, কোনো ধরনের দুর্নীতি, অনিয়ম ও দালালের তৎপরতা এই হাসপাতালে নেই। কোনো ডাক্তারই রোগীদের বাইরে পাঠান না। চোখের সব ধরনের চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা এখানে আছে। তিনি বলেন, আমাদের হাসপাতালে কোনো ডাক্তার বা কোনো স্টাফকে দুর্নীতি করার সুযোগ দেব না। কারো বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণ পেলে তাকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হবে। সে যে-ই হোক না কেন। এই হাসপাতালের মালিক জনগণ। আর জনগণকে সেবা দেব আমরা।

একই লেখা

Leave a Comment